বঙ্গবন্ধু কর্ণার এখন চায়ের দোকান “হাওয়াই”! প্রধান শিক্ষক বললেন, ভিন্ন কথা

বঙ্গবন্ধু কর্ণার এখন চায়ের দোকান "হাওয়াই"! প্রধান শিক্ষক বললেন, ভিন্ন কথা

প্রধান শিক্ষক মঈনুল আবেদীন

বঙ্গবন্ধু কর্ণার এখন চায়ের দোকান “হাওয়াই”! প্রধান শিক্ষক বললেন, ভিন্ন কথা

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী গোমদন্ডী পাইলট উচ্চ বিদ‍্যালয়ের বঙ্গবন্ধু কর্ণার ভেঙে চায়ের দোকান করার অভিযোগ উঠেছে বিদ‍্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে বিদ‍্যালয়ের শিক্ষক- কর্মচারীরা স্থানীয় ইউ.এন.ও বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- মুজিব জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আদর্শকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে দেশের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে “বঙ্গবন্ধু” কর্ণার স্থাপনের উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ধারাবাহিকতায় সে-বছর বোয়ালখালী উপজেলা ও পৌর সদরে অবস্থিত গোমদন্ডী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ‍্যালয়ের ১০৮ নং কক্ষকে বঙ্গবন্ধুর ছবি, বই ও পোস্টারে সু-সজ্বিত করে বঙ্গবন্ধু কর্ণারে রুপান্তর করে উপজেলা প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে সাথে নিয়ে উদ্বোধন করেন তৎকালীন ম‍্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সদ‍্য প্রয়াত সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ। উদ্বোধনের বেশ কিছুদিন পর বিদ‍্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরস্পর যোগসাজশে ভবনের নীচ তলার ১০৮ নং কক্ষটিতে গড়ে তোলা সু-সজ্বিত বঙ্গবন্ধু কর্ণারসহ ৩ টি কক্ষ ভেঙ্গে অবৈধভাবে দোকান বানিয়ে ভাড়ায় লাগিয়ে দেওয়া হয়।

উল্লেখিত বঙ্গবন্ধু কর্ণারে “হাওয়াই” নামক চায়ের দোকানে এখন বিক্রি করা হয় চা, সিগারেট। এ ব্যাপারে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছে বিদ‍্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক।

তাদের অভিযোগ- বিদ‍্যালয়ের সামনে ফ‍্যাসিলিটিজ বিভাগের গড়া ভবনের নীচ তলার ১০৮ নং কক্ষটিতে গত ২০২১ সালে “বঙ্গবন্ধু কর্ণার” উদ্বোধন করা হয়েছিল একটি ভাবগম্ভীর্যপূর্ণ সুন্দর অনুষ্ঠানের মাধ‍্যমে। তখন সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ছবিসহ মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত অনেক সংগ্রহ দেখেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে কোন এক সময় এগুলো হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেছে তা আমরা কেউ জানিনা। তবে গত একটি দীর্ঘ বন্ধের পর থেকে লক্ষ্য করছি ওই কক্ষটি ভেঙ্গে দোকান বানিয়ে একটি টি স্টলকে ভাড়া দেয়া হয়েছে। কারো সাথে আলাপ -আলোচনা ছাড়াই প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে অবৈধভাবে তা করেছেন। সাধারণ শিক্ষকরা এতে প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক তার সাথে থাকা সহযোগী এক শিক্ষকসহ নানা হুমকি ধমকি দিয়ে সাধারণ শিক্ষকদের দমিয়ে রাখতো বলে অভিযোগ করেন সাধারণ শিক্ষকরা।

এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার সত‍্যতা স্বীকার করে বোয়ালখালী ইউ.এন.ও মোহাম্মদ মামুন বলেন- ব‍্যাপারটা আমি খতিয়ে দেখছি। যদি প্রমাণ মিলে তাহলে এর থেকে কেউ রেহাই পাবে না, শাস্তির আওতায় আসতে হবে বলেও জানান তিনি।

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে এই প্রতিবেদক আজ দুপুর ২টায় প্রধান শিক্ষক মঈনুল আবেদীন নাজিমের ০১৮১৭-৭৬৪৮২৮ নম্বরের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি বলেন, “আমি বিদ্যালয়ের কাজে জেলা শিক্ষা অফিসে যাচ্ছি। উল্লেখিত বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ” আমাদের বিদ্যালয়ে আগে কখনো “বঙ্গবন্ধু কর্ণার” ছিল না। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি টাঙানো ছিল। তবে এখন বিদ্যালয়ের ৩য় তলায় স্বতন্ত্রভাবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত সুন্দর সুসজ্জিত রূপে বড় পরিসরে “বঙ্গবন্ধু কর্ণার” করা হয়েছে।” প্রয়োজনে বিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষককে সাথে নিয়ে দেখে আসার অনুরোধ জানান তিনি।

অন্যদিকে বিদ‍্যালয় পরিচালনা কমিটির প্রভাবশালী সদস‍্য, উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা ভাইস-চেয়ারম‍্যান শামীম আরা বেগম বলেছেন- হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের সদ‍্য প্রয়াত সভাপতি আলহাজ্ব মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপিসহ আমরা একটি বঙ্গবন্ধু কর্ণার উদ্বোধন করেছিলাম এ বিদ‍্যালয়ে। এখন কেউ যদি নিজেদের স্বার্থে সেটি ভেঙ্গে অন‍্যকাজে ব‍্যবহার করে তাহলে সেটি সে গর্হিত কাজ করেছে। জাতির জনকের প্রতি অসম্মান দেখিয়েছে। এর জন‍্য যথাযথ শাস্তি তাকে পেতেই হবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুর সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও যারা টাকার বিনিময়ে স্কুলের বঙ্গবন্ধু কর্ণার ভেঙে চায়ের দোকান বানিয়েছে তাদের কি বিচার হবে তা এখন দেখার বিষয়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email