
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বাসাবাড়িতে গ্যাসের চুলা জ্বলছে না। তাই দোকান থেকে খাবার কিনে খেয়েছেন অনেকেই। সংকটের কারণে চট্টগ্রামে কোনো ফিলিং স্টেশনে গ্যাস বিক্রি হচ্ছে না। রাস্তায় গ্যাসচালিত যানবাহনের সংখ্যা কমে গেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
আজ রোববার চট্টগ্রাম নগরের ফসিল, রেইনবো সিএনজি স্টেশন লিমিটেড, সেনা কল্যাণ সংস্থা ফিলিং স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, কোথাও গ্যাস নেই। স্টেশনগুলোতে নেই গ্যাসচালিত যানবাহনের ভিড়।
ফসিলের কর্মচারী খোরশেদ আলম বলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকার গ্যাস বিক্রি হয়। কিন্তু গতকাল শনিবার থেকে গ্যাস বিক্রি বন্ধ। সিএনজিচালিত অটোরিকশা এসে ফিরে যাচ্ছে। আবার কিছু অটোরিকশা অকটেন নিচ্ছে।
ফসিলে গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ দিদার। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম পড়ছে লিটারে ৪৩ টাকার মতো। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার গ্যাস লাগে। অটোরিকশায় কিছু গ্যাস আছে, যা দিয়ে ঘণ্টাখানেক গাড়ি চলবে। তাই বিভিন্ন পাম্পে ঘুরছেন। কিন্তু কোথাও পাচ্ছেন না। আবার অকটেন নিলে বেশি খরচ পড়বে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে গত শুক্রবার রাত ১১টায় আগাম সতর্কতায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। মহেশখালীতে থাকা ভাসমান দুটি টার্মিনাল ইতিমধ্যে গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে আমদানি করে আনা এলএনজি রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। সেখান থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমে গেছে। ফলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে দফায় দফায়।
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে আছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। জানতে চাইলে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার সকাল থেকে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এলএনজি টার্মিনাল চালু না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যা থাকবে।
চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকায় স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন সরকারি চাকরিজীবী ফেরদৌসী আক্তার। প্রতিদিন সকালে রান্না সেরে কর্মস্থল যান তিনি। কিন্তু আজ সকালে রান্নাঘরে গিয়ে চুলা জ্বালাতে পারেননি। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর অনলাইনে খাবার আনিয়ে নেন। দুপুরের খাবারও রেস্তোরাঁ থেকে কিনে এনেছেন।
মোমেনবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ রেজওয়ান বলেন, গ্যাস না থাকায় পাশের রেস্তোরাঁ থেকে ভাত ও মাছ কিনে এনে তাঁর মেয়েকে খাইয়েছেন। রাতে কী হবে, সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের কোথাও গ্যাসের চুলা জ্বলছে না। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি হয়েছে। নগরের ডিসি রোডের বাসিন্দা আকমল হোসাইন বলেন, গতকাল শনিবার চুলা কিছুটা জ্বলেছিল। আজ সকাল থেকে একদমই বন্ধ। এতে বিপাকে পড়তে হয়েছে। রান্না হয়নি।
চট্টগ্রামে কেজিডিসিএলের মোট গ্রাহক-সংযোগ ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি, বাকিগুলো শিল্প-বাণিজ্যসহ অন্য খাতে। এসব খাতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাওয়া যায় ২৭০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সেখান থেকে সরবরাহ বন্ধ থাকায় গতকালও রিজার্ভ থেকে গ্যাস নিয়ে সরবরাহ করছে কেজিডিসিএল।
সংকটের কারণে রোববার রাস্তায় গ্যাসচালিত যানবাহন ছিল একেবারে হাতে গোনা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রথম আলোর এ প্রতিবেদক ও একজন আলোকচিত্রী নগরের মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, জিইসি, টাইগারপাস, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ ঘুরে এ চিত্র দেখেন। এ সময় অল্প কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় চলাচল করতে দেখা গেছে। কিন্তু চালকেরা ভাড়া দাবি করছেন স্বাভাবিকের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি।
আরাফাত ইসলাম নামের এক যাত্রী নিউমার্কেট এলাকা থেকে জিইসি আসেন ১৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে। জিইসি এলাকায় তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এ পথের ভাড়া ১০০ টাকার মতো। কিন্তু ১৪০ টাকার নিচে কোনো অটোরিকশা পাওয়া যাচ্ছিল না।
আরাফাত একটি অটোরিকশা পেলেও অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে গ্যাসচালিত যানবাহন পাননি। বিশেষ করে সকাল ১০টার দিকে যানবাহনের অভাবে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসমুখী যাত্রীরা। যদিও ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে রাস্তায় স্বাভাবিকের চেয়ে পথচারী ও যাত্রী কিছুটা কম ছিল।