আটলান্টিকে নিখোঁজ সাবমেরিন টাইটান কতটা শক্তিশালী ছিল?

আটলান্টিকে নিখোঁজ সাবমেরিন টাইটান কতটা শক্তিশালী ছিল?

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাজার হাজার ফুট গভীরে নিয়ে যেতে পারে, সারাবিশ্বে এমন মাত্র ৫টি সাবমারসিবল যান আছে এই মুহূর্তে। এর মধ্যে মাত্র একটি পরিচালিত হয় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। সেই ডুবোযানটিই হলো টাইটান। নাসার বিশেষজ্ঞ টিমের সহায়তায় তৈরি হয়েছিল মাত্র ২২ ফুট দৈর্ঘ্যের ডুবোযানটি। আকারে ছোট হলেও যেতে পারে সাগরের তলদেশের ১৩ হাজার ১২৩ ফুট গভীর পর্যন্ত। ভেতরেই আছে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা। রোববার টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে এই টাইটানে চড়েই পাড়ি দেন ৫ আরোহী। তবে আটলান্টিকের বুকে সাবমেরিনটি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরই আলোচনায় আসে এই ডুবোযান। খবর রয়টার্সের।

টাইটানে যাত্রার আগেই একটি চুক্তিতে সই করতে হয় পর্যটকদের। যেখানে জানিয়ে দেয়া হয়, কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদিত নয় ডুবোযানটি। এরপরও বছরের পর বছর রোমাঞ্চকর স্বাদ নিতে এই ডুবোযানে সমুদ্র তলদেশে যাত্রা করেন ধনকুবের অভিযাত্রীরা।

সাইক্লপস টু মডেলের ডুবোযানটির ওজন ১০ হাজার ৪৩২ কেজি। দৈর্ঘ্যে মাত্র ২২ ফুট। ৯.৫ ফুট প্রস্থ আর উচ্চতা ৮.৩ ফুট। এর গতি ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার। অ্যারোস্পেস গ্রেডের কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি কাঠামোর বহিরাবরণ ফাইবার গ্লাসের। তবে মূল সমস্যাটি হলো, এতে কোনো দরজা নেই। প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য খুলতে হবে ১৭টি স্ক্রু। একটিমাত্র পোর্টহোল জানালা আছে এতে। যেখান থেকেই দেখা মেলে বাইরের সামুদ্রিক জগৎ।

বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক ডেভিড পগ এ নিয়ে বলেন, এটা সত্যিই অনেক ধনী রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষদের জন্য। যারা ব্লু অরিজিন রকেটে মহাকাশ ভ্রমণ, আগ্নেয়গিরি দর্শন বা হাঙরের সাথে সাঁতার কাটতে ভালোবাসে। নিজেদের জীবন নিয়ে খেলে।

সর্বোচ্চ ৫ আরোহীর ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন, একেবারেই কম উচ্চতার টাইটানে নেই কোনো আসন। ফলে আরোহীদের বসতে হবে মেঝেতেই। এর ভেতরে ও বাইরে আছে অত্যাধুনিক ক্যামেরা।

মডিফায়েড লজিটেক গেমিং কন্ট্রোলারের সাহায্যে পরিচালনা করা হয় ডুবোযানটি। সোনার নেভিগেশন সিস্টেমের পাশাপাশি, টুইন থাম্বস্টিক ও চারটি রঙিন বোতাম ব্যবহার করে সাবমেরিনটিকে বিভিন্ন দিকে যাওয়ার দিক নির্দেশনা দেয়া হয়।

মডিফায়েড লজিটেক গেমিং কন্ট্রোলারের সাহায্যে পরিচালনা করা হচ্ছে টাইটান সাবমেরিন।

মাদারশিপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর টাইটানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা এর আগেও বহুবারই হয়েছে। তবে প্রতিবারই অভিযান শেষে ঠিকঠাক ভেসে উঠেছে সাবমারসিবল যানটি। তবে এবারের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি কপালে ভাঁজ ফেলেছে সংশ্লিষ্টদের। তাই এটি উদ্ধারে নিযুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দলের ৭টি বিশেষায়িত জাহাজ।

এই যাত্রাকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে আখ্যা দিয়েছেন খোদ আগের টাইটান যাত্রীরাই। আলোচিত জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষকে নিজ চোখে দেখে আসার স্বাদ পূরণ করেছিলেন ইউটিউবার অ্যালান এস্ত্রাদা। তিনি বলেন, এই যাত্রায় প্রাণ নিয়ে টানাটানি হতে পারে সেটি সকলেই জানে। ১ হাজার মিটার গভীরে গিয়ে আমরাও নিয়ন্ত্রক জাহাজের সাথে সংযোগ হারিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম যাত্রা বাতিল হবে। পরে আবার যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়।

একই অভিজ্ঞতা জানিয়ে মার্কিন প্রযোজক ও লেখক মাইক রেইস বলেন, আমি চারবার সাগরের তলদেশে গিয়েছি। প্রতিবার যোগাযোগ হারিয়েছি। উপরিভাগের সাথে যোগাযোগে সমস্যা হয়েছে। সত্যিই খুব ঝুঁকিপূর্ণ এটি।

উত্তর আটলান্টিকের গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপ পর্যন্ত পৌঁছানোর সময় ধরা হয় দু’ঘণ্টা। কয়েক ঘণ্টা ধ্বংসাবশেষ দর্শন শেষে আবার ফিরে আসে ডুবোযানটি। সব মিলিয়ে ডাইভের সময় ধরা হয় ১০ ঘণ্টা। এবার সেই সময় বহু আগেই পেরিয়ে যাওয়ায় ধনকুবের যাত্রীদের বেঁচে ফেরার আশা প্রায় ক্ষীণ।

প্রসঙ্গত, রোববার (১৮ জুন) নিউ-ফাউন্ড-ল্যান্ডের কাছেই সমুদ্রে ডুব দেয় সাবমেরিনটি। মূলত আলোচিত জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাচ্ছিলেন আরোহীরা। কিন্তু পৌনে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে বিচ্ছিন্ন হয় যোগাযোগ। নিখোঁজ আরোহীদের মধ্যে আছেন ব্রিটিশ ধনকুবের হামিশ হারডিং, পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহাজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email