
ফুড়ইন’, ‘ফুড়ইন’ এভাবেই উচুঁ গলায় হাঁকডাক ছেড়ে পথে প্রান্তরে ফুল ঝাড়ু বিক্রি করেন অন্ধ মানিক। জীবন ও জীবিকার সংগ্রামে এ কাজে তাকে সহায়তা করেন মেয়ে সীমা।
অন্ধ বাবার পথের ‘সারথি’ সীমা আকতার। তবে রথ নেই। পায়ে হেঁটে পাড়া-গাঁ ঘুরে বিক্রি করেন ঝাড়ু ফুল। সীমার বয়স ১০ বছর। সে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। বাড়ির পাশের স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্রী সীমা। জীবিকার তাগিদে অন্ধ বাবাকে ফেরি করতে পথ দেখায় সে। শুধু কি তাই! টাকা লেনদেনে বাবাকে সহযোগিতা করে সে। সীমাদের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের গুচ্ছগ্রামে।
উপজেলার উত্তর সারোয়াতলী এলাকায় ঝাড়ু ফুল বিক্রির সময় কথা হয় সীমা ও তার বাবার সাথে। সীমা জানায়, বাবার সাথে ঘুরতে ভালোই লাগে। বাড়িতে তার একজন ছোট বোন আছে। বোনটি মায়ের সাথেই থাকে। বাবার হাত ধরে পথ দেখিয়ে পাড়ায় পাড়ায় নিয়ে যায় সীমা। বিক্রি শেষে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় বাবাকে।
সীমার বাবা মো. হারুনুর রশিদ মানিক বলেন, ‘এক সময় পাহাড়ে বাঁশ-কাঠ কাটতাম। মাটি কাটার কাজ করেছি। চালিয়েছিলাম রিকশা। দিনমজুরী করে ভালো ছিলাম পরিবার নিয়ে। হঠাৎ করে চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করি। একপর্যায়ে ২০০৮ সাল থেকে আর দেখতে পাচ্ছি না দুই চোখে।’
তিনি জানান, তারা ৫ ভাই বোন। এর মধ্যে তিনিসহ ২ ভাই ও ১ বোন অন্ধ। তার পৈত্রিক সম্পত্তি এক চাচার কাছে বিক্রি করে দিয়ে ১৯৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ের পর একই এলাকার গুচ্ছগ্রামে ঘর বাঁধেন। অন্ধত্বের কারণে বোনটির বিয়ে হয়নি। সীমাকে সাথে নিয়ে ফেরি করতে খুব খারাপ লাগে জানিয়ে মানিক বলেন, ‘মেয়েটি আমার সাথে মাইলের পর মাইল হাঁটে। এতে খুবই কষ্ট হয়। ভালো একটা জামা কিনে দিতে পারি না। ভালো খাওয়াতে পারি না।’
মানিক জানান, সীমা করলডেঙ্গার তালুকদার পাড়ার তৈয়বীয়া মাদ্রাসায় পড়ে। চার মেয়ের মধ্যে সীমা তৃতীয়। বড় মেয়ে রুমার বিয়ে হয়েছে। অভাবের কারণে সীমার যমজ বোনকে ছোটবেলায় তার ফুফুর কাছে দত্তক দিয়ে দিয়েছি।
সংসার স্বচ্ছল রাখতে সীমার মা পাহাড়ে কাঠ কুড়িয়ে বিক্রি করে, মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। আর মানিক ঝাড়ু ফুল ও লেবু কিনে ফেরি করেন। এতে দৈনিক ৩-৪শত টাকা আয় হয়। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ডাক্তার দেখাতে পারিনি। তিনি বলেন, আল্লাহর ভরসায় সীমাকে নিয়ে পথ চলছি। জানি না এর শেষ গন্তব্য কোথায়।