
গার্ড অব অনার ছাড়াই বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাসদ নেতা ছৈয়দুল আলম এর দাফন সম্পন্ন
নিজস্ব সংবাদদাতা, বোয়ালখালী: প্রবীণ রাজনীতিবিদ জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি (আম্বিয়া) ছৈয়দুল আলম (৭১) ইন্তেকাল করেছেন ( ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)। ৩ মার্চ শুক্রবার ভোর তিনটার সময় নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়ার আকুবদন্ডী গ্রামের মরহুম কামাল উদ্দীনের ছেলে। মৃত্যুকালে স্ত্রী, ১ ছেলে ও ২ মেয়েসহ আত্মীয় স্বজন রেখে যান। শুক্রবার দুপুর ২টায় স্থানীয় বৈলতলী মাদ্রাসা মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ছৈয়দুল আলম ১৯৬২ সালে বোয়ালখালী উপজেলা ছাত্র ইউনিয়ন সেক্রেটারী নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে স্কুল পর্যায়ে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ছৈয়দুল আলমকে গার্ড অব অনার না দেওয়ায় জানাযার মাঠে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষে জানাযার পূর্বে নিজেই উপস্থিত সবাইকে নিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন বলে দাবী করেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী বোয়ালখালীর সন্তান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন।
তিনি আরো বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি তিনি মুক্তি বাহিনীর অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করতেন। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়া এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে? বেঁচে থাকতে দুনিয়ায়ও সম্মান পেলেন না, মরার পরেও পেলেন না রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নূন্যতম সম্মান। তাই ক্ষোভে দুঃখে উপস্থিত জনতাকে সাথে নিয়ে আমি নিজেই তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে চেষ্টা করেছি মাত্র। যেটি রীতিমতো সবদিকে আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।”
জাসদ নেতার মৃত্যুতে বিএনএফ প্রেসিডেন্ট এর শোক বিবৃতিঃ গতকাল রাত ৩ টায় আকুবদন্ডী নিবাসী ও কেন্দ্রীয় জাসদের সহ-সভাপতি সৈয়দুল আলম এর ইন্তেকালের সংবাদে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি আমাদের সময়কালে ‘৬৯র গণআন্দোলন ও ৭১ এর সুমহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন।
তাঁর আকস্মিক ইন্তেকাল সমসাময়িক জাসদ রাজনৈতিক অঙ্গনে শূন্যতার সৃষ্টি হলো। তিনি পূর্বে প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং ৭৫ পরবর্তী জাসদ রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তার বড় ভাই মাহবুব আলম পোপাদিয়া ইউপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তিনি ও আমি হাজী মুহাম্মদ দানেশ’র নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন জাগমুই-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে যুক্ত ছিলাম। বৃটিশ বিরোধী তেভাগা আন্দোলনের নেতা হাজী মুহাম্মদ দানেশ (দিনাজপুরের) এর দল জাগমুই’কে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিব জাতীয় দল বাকশাল এ একীভূত করেছিলেন।
বর্নাঢ্য রাজনীতিবিদ সৈয়দুল আলম জাসদ নেতা সাবেক এমপি (চট্টগ্রাম -৮) মাইনুদ্দিন খান বাদলের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন। মাস খানেক আগে তিনি মুঠোফোনে আমার সাথে চলমান রাজনৈতিক বিষয়ে মতবিনিময় করে নতুন ভাবনার কথা জানান কিন্তু তার শেষ ইচ্ছে অপূর্ণই থেকে গেল।
তাঁর মৃত্যুতে জাতি হারাল একজন দেশপ্রেমিক মানুষ আর আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বন্ধুকে। আমি মরহুমের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি, আলাহ যেন তাঁকে জান্নাতবাসী করেন, আমিন।
ব্যাংকার মোহাম্মদ ইসমাইল এর ওয়াল থেকে: হাত যেন থমকে যায়, কি লিখব বুঝে উঠতে পারছি না, এই তো গতকালও টেলিফোনে তার সাথে কথা। প্রতিদিন ব্যাংকিং, রাজনীতি, সমাজনীতি, দেশ নিয়ে প্রতিনিয়ত কথা হয়।
সকালে ফেইসবুক খুলে দেখি, নিভৃতচারী, অকুতোভয় যোদ্ধা, নীরব মহীরুহ, বাংলাদেশের হাইস্কুল পর্যায়ে প্রথম শহীদ মিনার স্থাপনকারী, জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট, এককালের আয়ুবশাহী আমলের তুখোড় ছাত্রনেতা, আইয়ুব খান এর মার্শাল-ল উপেক্ষা করে যে ছাত্রনেতা যার নেতৃত্বে বাংলাদেশে প্রথম শহীদ মিনার স্থাপন করেন, সৈয়দুল আলম দাদা ইন্তেকাল করেছেন। ইননা লিল্লাহ ওয়াইননা ইলাইহি রাজেউন।
তিনি আমার এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, বোয়ালখালী শাখা, ওয়ান ব্যাংক সিডিএ এভিনিউ শাখার গ্রাহক ছিলেন। আমাকে পরম মায়ামমতা, আদর স্নেহ করে মার পেটের ছোট ভাই হিসেবে দেখতেন। আমাকে সবসময় তুই করে সম্বোধন করে কথা বলতেন। তাহার দুই নম্বর গেইট কর্ণফুলী বাজারে একটা ঔষধের দোকান আছে। ঐ দোকানে বসে, ব্যাংক এর চেয়ারে বসে, দেশ, জাতি, স্বাধীনতা যুদ্ধ, দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে অনেক ইতিহাস জানিয়ে গেছেন।
ছাত্রজীবন থেকে কোন অসততা, কোনো অবৈধ কিছু ধারে কাছেও আসতে দেয় নাই। বোয়ালখালীর আরেক অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা, কৃতি সন্তান, তিনবার এর এমপি মঈন উদ্দীন খান বাদল এর ডান হাত ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে মঈন উদ্দীন খান বাদল এর সিনিয়র ছিলেন। মঈন উদ্দীন খান বাদল তিনবার এমপি থাকাকালীন সময়ে, উনার ডান হাত থাকা সত্ত্বেও জীবনে কোন অসততা, অনৈতিক সুবিধা নেয় নাই।
এইভাবে অল্প সময়ে সৈয়দ বদদা চলে যাবে, তা মোটেই মেনে নিতে পারছি না? আমি বোয়ালখালীর এই অকুতোভয় কৃতি সন্তান, সততার প্রতীক, নিরহংকার, নির্লোভ বড় ভাই, জনাব মরহুম সৈয়দুল আলম দাদার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। মহান রাব্বুল আলামীন তাহার গুনাহ মাফ করে জান্নাত বাসি করুক, রাব্বুল আলামীনের দরবারে দোয়া করি।
বোয়ালখালী আওয়ামীলীগের শ্রদ্ধা ও পুষ্পমাল্যদান: কেন্দ্রীয় জাসদ সহসভাপতি বোয়ালখালীর সন্তান সৈয়দুল আলমের মৃত্যুতে বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কবরে পুষ্পমাল্যদান করেছে সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজা।
৩ মার্চ বাদে জুমার পর মরহুম সৈয়দুল আলমের নামাজে জানাজা শেষে আওয়ামীলীগ পুষ্পমাল্যদান করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক উপনির্বাচনে নৌকার মাঝি রেজাউল করিম রাজা। উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এস এম সেলিম, আহমদ হোসেন চেয়ারম্যান, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি শফিকুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, এস এম আলমগীর, এস এম জসিম উদ্দিন চেয়ারম্যান, ইলিয়াছ জাফর, নুরুল আমিন খান, সৈয়দ ইয়াছির, কধুরখীল ইউপি আ. লীগের আহবায়ক মোঃ দিদারুল আলম, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বাপ্পি, শওকত ওসমান জাহাঙ্গীর, শামসুল আবেদীন তারেক, নাজ আহমদ পাভেল, এস এম সরফরাজ মাসুদ, মিজানুর রহমান সেলিম, সেকান্দর আলম বাবর, ওয়াহিদ মুরাদ নোমান, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক- সৈয়দ মোঃ নজরুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন, ইলিয়াছ শরীফ, এরশাদ চৌধুরী, আসাদুজ্জামান হাসান, নেজাম উদ্দিন, ইকবাল হোসেন মেম্বার, মোঃ এনাম প্রমুখ।
জানাযায় সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ, চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় শতশত নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মরহুমের প্রতি পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান।