বোয়ালখালীর উপনির্বাচন বিতর্কিত হতে দেওয়া যাবে না: চট্টগ্রামের ডিসি

রাত পোহালেই বোয়ালখালীতে উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচন

রাত পোহালেই বোয়ালখালীতে উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচন

বোয়ালখালীতে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন আজ ১৬ মার্চ। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যানের শূন্য পদে উপনির্বাচন আজ ১৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত হবে।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালখালী উপজেলায় ২ লাখ ১৬ হাজার ৮১৭ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৫ হাজার ৯২ ও নারী ভোটার ১ লাখ ১ হাজার ৭২৫ জন।

বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম গত বছরের ২০ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। পরে গত ৪ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য ঘোষণা দিয়ে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

প্রয়াত নুরুল আলম ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

নির্বাচন নিয়ে গত ৮ মার্চ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিতম তবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

তিনি বলেছেন, বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন ও নাজিরহাট পৌরসভা নির্বাচন কোনোভাবে বিতর্কিত হতে দেওয়া যাবে না। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে প্রতি তিন ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সভায় এসব কথা বলেন আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। গত ৮ মার্চ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক বলেন, ভোটকেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকবে। কেন্দ্রে গিয়ে আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার, অযথা গোলযোগ সৃষ্টি করলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা গুজব রটালে দোষীদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শা‌ন্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সরকার বদ্ধপরিকর।

ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদান করা বিষয়ে ১৩ ও ১৪ মার্চ নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। যা সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত স্টিকার ছাড়া কোনো যান্ত্রিক যানবাহন নির্বাচনী এলাকায় চলবে না। ভোটের ৩৬ ঘণ্টা আগে থেকে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে। এ সময়ে বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেওয়া আমাদের সবার কাম্য। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে। ভোট নিয়ে ফেসবুকে কোনো ধরনের গুজব ছড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বোয়ালখালীর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে ৮৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এসব কেন্দ্রে ৫০০ পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি প্রয়োজনীয়সংখ্যক আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। র‌্যাব ও বিজিবি টহলের পাশাপাশি তিনটি ইউনিয়ন মিলে স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করবে।

নির্বাচনী মতামত 
নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেই মানুষের। তারপরও আমাদের গ্রাম থেকে ভোট দিতে যাবেন লোকজন, বললেন শিবাশীষ সেন। জ্যেষ্ঠপুরা গ্রামের বাসিন্দা নৌকার প্রার্থী রেজাউলের পক্ষে কিছু নেতা-কর্মীকে প্রচারণা চালাতে দেখা যায় জ্যেষ্ঠপুরায়। সেখানে দেখা হয় শ্রীপুর খরনদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোকারমের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমাদের নৌকার প্রার্থী এগিয়ে আছেন। আমরা বিভিন্ন মানুষের কাছে যাচ্ছি। উপনির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম। তারপরও ভোট উৎসবমুখর হবে।”

রেজাউল করিমের বাড়িও শ্রীপুর খরনদ্বীপ এলাকায়। তিনি গত শনিবার প্রচারণা চালিয়েছেন কদুরখিল এলাকায়। তাঁর পক্ষে উপজেলা ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও রয়েছেন। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এস এম আবুল কালাম নৌকার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট।

অন্যদিকে মিজানুর রহমান পৌর এলাকার বাসিন্দা। সাবেক প্যানেল মেয়র হিসেবে তাঁর একটা জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে এখন তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে দেখা করেন না। এমনকি মুঠোফোনেও তাঁর সঙ্গে কথা বলতে ভয় পান। কিন্তু ভেতর-ভেতর কিছু নেতা-কর্মী তাঁকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

নৌকার প্রার্থী শুক্রবার মোটর শোভাযাত্রা করেছেন। এ ছাড়া আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছেন, এমনটি বললেন কাজী আয়েশা ফারজানা। তিনি দোয়াত-কলম প্রতীকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলমের মৃত্যুর পর রেজাউল করিম দলের শূন্য পদে আসীন হন। পাশাপাশি চেয়ারম্যান পদেও মনোনয়ন পেয়েছেন। চেয়ারম্যান ও দলের সাধারণ সম্পাদক পদ দুটির দিকে অনেকের চোখ ছিল। মিজানুর সেই কোন্দল কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন।

পৌর সদরে মিজানুরের গণসংযোগকালে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি বলেন, “আমি বিদ্রোহী প্রার্থী নই। কারণ, আমি দলের মনোনয়ন চাইনি। আমি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছি। আমার প্রত্যাশা শুধু নির্বাচনটি সুষ্ঠু হোক।” আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আয়েশা ফারজানা গত শুক্রবার প্রচারণা চালান আমুচিয়া ইউনিয়নের ধোরলা গ্রামে এক মেজবান অনুষ্ঠানে গিয়ে।

ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করছেন এ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অভিযোগও দিয়েছেন তাঁরা। আয়েশা ফারজানা বলেন, “নৌকার প্রার্থী শুক্রবার মোটর শোভাযাত্রা করেছেন। এ ছাড়া আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছেন।”

অভিযোগ প্রসঙ্গে রেজাউল করিম বলেন, “পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা ও মোটর শোভাযাত্রার অভিযোগ মিথ্যা। আমার সঙ্গে জনগণ আছে। আশা করি, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আমাদের বিজয় হবে।’

জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, “পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগগুলো পুলিশ তদন্ত করছে।”

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email