বিরল মহাজাগতিক মিলন

বিরল মহাজাগতিক মিলন

ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে চাঁদের সঙ্গে এক সারিতে দেখা গিয়েছিল সৌরমণ্ডলের উজ্জ্বলতম গ্রহ শুক্র এবং বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিকে। তারপরে আবার নতুন মহাজাগতিক দৃশ্য দেখল বাংলা। বসন্তের আকাশে আবার বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নতুন অবস্থানে আবির্ভাব হল শুক্র গ্রহের। সৌরমণ্ডলের উজ্জ্বলতম গ্রহটি চলে এল চাঁদের একেবারে কাছে। তারপর হারিয়ে গেল কয়েক মিনিটের জন্য!

 

ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে চাঁদের সঙ্গে এক সারিতে দেখা গিয়েছিল শুক্র এবং সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিকে। এবার চাঁদের তলায় চলে এল শুক্র। মনে করিয়ে দিল পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের সেই ‘হিরের আংটি’র কথা। শুক্রের সন্ধ্যায় বেশ কিছুক্ষণের জন্য চাঁদের আড়ালেও চলে গিয়েছিল শুক্র।

কেবল বাংলাদেশেই নয়, পশ্চিবঙ্গ থেকেও এমন দৃশ্য দেখা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার বিরল ‘মহাজাগতিক মিলন’ দেখার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিঙ’–এর তরফে টেলিস্কোপ এবং ক্যামেরা ব্যবহার করে হ্যানলে থেকে এই মহাজাগতিক ঘটনা ‘লাইভ স্ট্রিম’ করা হয়েছিল। উৎসাহীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হাজির ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় দৃশ্যটি দেখার পর খবরটি ফোনে ফোনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ এই দৃশ্যটি ক্যামেরায় ধারণও করেছেন। জানা যায়, দৃশ্যটি দেখার পর কৌতূহলী মানুষ ফোনে ফোনে একে অপরকে দেখতে বলেছে।

কেউ কেউ বলছে, আকাশে চাঁদ দেখেছি, তারা দেখেছি; কিন্তু চাঁদের নিচে তারকা কখনও দেখিনি। দেখা গেছে সন্ধ্যার পর চাঁদ যত নিচে নামছে ‘তারা সদৃশ্য’ বস্তুটিও নিচে নামছিল।

বগুড়া লেখক চক্রের সভাপতি ইসলাম রফিক বলেন, আমিও দেখছি, অনেককেই বলছি দেখতে। আসলেই এমনটি এর আগে কখনও দেখা যায়নি। বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের দপ্তর সম্পাদক এইচ আলীম বলেন, বগুড়ার আকাশে ‘সাঈদী দেখার গুজব’ হয় কিন্তু চাঁদের নিচে তারা–এটা গুজব নয়। উপভোগ করলাম দৃশ্যটি। বগুড়ার ধুনট উপজেলার মিন্টু মন্ডল বলেন, চাঁদের নিচে তারা আমার ৫০ বছরের জীবনে দেখিনি। কারণ কী?

গতকাল সন্ধ্যায় ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজ আদায় করে বোয়ালখালী উপজেলার গোমদণ্ডী সদরে বাজার করতে আসার পথে চাঁদের দিকে চোখ যায় সংবাদকর্মি আলমগীর রানার। তিনিও জীবনে এই প্রথম বিষয়টি লক্ষ্য করেন এবং উপস্থিত আরো অনেকের সাথে উপভোগ করেন।


প্রতি বছরই পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখার অপেক্ষায় থাকেন লাখ লাখ মানুষ। বিশেষ করে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে রমজান শুরু বা চাঁদ দেখার বিষয়ে আগ্রহ আরো বেশি থাকে। বাংলাদেশের আকাশে গত বৃহস্পতিবার পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সে হিসাবে শুক্রবার (২৪ মার্চ) থেকে পবিত্র রমজান শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশের আকাশে দেখা পবিত্র রমজান মাসের চাঁদের বয়স মাত্র দুদিন। এর মধ্যেই চাঁদের একটি ছবিকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা চলছে। চাঁদটিকে দেখতে আরো কয়েকদিনের বয়স্ক মনে হচ্ছে। মজার বিষয় হলো- চাঁদের একেবারে ঠিক নিচে শুক্র গ্রহটিকে দেখা যাচ্ছে।

এটি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন অনেকে। এটি আসলে কী, তা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মতামত দেখা যায়। কেউ কেউ এটিকে অদ্ভুত ধরনের কিছু বলেও আখ্য দেন। কিন্তু এটি মূলত শুক্রগ্রহ বা শুকতারা বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কক্ষপথে চাঁদ ও শুক্র গ্রহ খুব কাছাকাছি অবস্থান করায় এমনটি দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকিউ ওয়েদার বলছে, পৃথিবীর দুই প্রতিবেশী গ্রহ শুক্র ও মঙ্গল একে অপরের সবচেয়ে নিকটে আসতে চলেছে। একই সঙ্গে এক সারিতে দেখা যাবে শুক্র-মঙ্গল ও চাঁদকে। এমন ঘটনাকে Ôplanetary conjunctionÕ বলে আখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা। পরিষ্কার আকাশে খালি চোখেই দেখা যাবে এমন মহাজগতিক রোমাঞ্চ। পৃথিবী থেকে দুটি গ্রহকে তারার মতো দেখা গেলেও বোঝা যাবে দুটি গ্রহ কাছাকাছি চলে এসেছে।

আগামী ২৬ মার্চ, মঙ্গল ও শুক্র গ্রহ নিজেদের কক্ষপথ থেকে সবচেয়ে কম দূরত্বে ও একই সারিতে অবস্থান করবে। ঐদিন সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে দুটি গ্রহ দৃশ্যমান হবে।

এর আগে, ২৫ মার্চ রাতে চাঁদের কাছাকাছি আসবে এই দুই প্রতিবেশী গ্রহ, যা মহাকাশ বিজ্ঞানে বেশ বিরল ঘটনা।

এদিকে, এ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য করছেন। অনেকে আবার চাঁদের সৌন্দর্য তুলে ধরে এটি দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

সিনিয়র সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক মেহেদী হাসান পলাশ নামে একজন লিখেছেন, মহাজাগতিক ঘটনা! চাঁদ ও শুক্র গ্রহ একই রেখায় দেখা যাচ্ছে। মহান আল্লাহ একমাত্র গায়েবী জানেন।

ইসরাফিল ফরাজী নামে একজন লিখেছেন, এতো সুন্দর চাঁদ জ্ঞান হওয়ার পর দেখিনি। কি সুন্দর “সুবহানাল্লাহ”। মনে হচ্ছিল চাঁদে এক টুকরো স্বর্ণ ঝুলছে।

রূপ কথা নামে একজন লিখেছেন, চাঁদের নীচে তারা দেখে মনে হচ্ছে, আরবী হরফ ب ‘বা’ প্রথম রমজানে কত সুন্দর উপহার আল্লাহর তরফ থেকে আলহামদুলিল্লাহ।

তালহা নামে একজন লিখেছেন, আকাশের চাঁদ এবং তার পাশের শুক্র ফেসবুকে এসে বসে আছে।

মোহাম্মদ নূর নবী নামে একজন লিখেছেন, চাঁদ এবং শুক্র গ্রহ কাছাকাছি এসে আরবি হরফ ب ‘বা’ এর আকার ধারণ করেছে।

আলামিন নামে একজন লিখেছেন, আমাদের বারান্দা থেকে এ মুহূর্তে তোলা রমজানের চাঁদ। ঠিক নিচে সন্ধ্যাতারাটি। ঠিক যেন একটা ড়! গাঢ় সোনালি রঙ এই চাঁদের। এখনও দেখতে পারেন অপূর্ব নান্দনিক নকশার এই চাঁদ।

মো. সালমান নামে একজন লিখেছেন, সুবহানাল্লাহ, আকাশে শুধু চাঁদ নয় ‘বা’ দেখছি লেখা। চাঁদ ও শুক্র গ্রহের বিরল অবস্থান।

আরিফা নামে একজন লিখেছেন, মাশাল্লাহ পহেলা রমজানে অন্য রকম বিচিত্র সুন্দর একটা চাঁদ দেখলাম প্রিয়জনদের সাথে।

আরাফ নামে একজন লিখেছেন, তারাটি চাঁদের সৌন্দর্য কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে! জাবেদ নামে একজন লিখেছেন, পারলে বাইরে গিয়ে একবার চাঁদটি দেখুন। পশ্চিম আকাশে রয়েছে। চাঁদের নিচে অবস্থান করছে শুক্রগ্রহ। হঠাৎ চোখ পড়ায় বিস্মিত হয়েছি। কেন তা দেখলেই বুঝবেন। অন্যরকম সুন্দর। এ রকম বহু মানুষ ফেসবুকে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email