ডিজিটাল জীবন যাত্রায় হাতিয়ার ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা

ডিজিটাল জীবন যাত্রায় হাতিয়ার ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা

মামুন রাফীঃ নোয়াখালীর দক্ষিণে মেঘনার মোহনায় বঙ্গোপসাগরে কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত হাতিয়া উপজেলা। প্রাকৃতিকভাবে নয়নাভিরাম হলেও নানা সমস্যায় জর্জরিত দুই হাজার ১০০ বর্গ কিলোমিটারের উপজেলাটি। এখানকার বাসিন্দাদের বড় আক্ষেপ ভাঙ্গন, বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ সমস্যা নিয়ে।

সারাদেশের উন্নয়ন-অর্জন থেকে পিছিয়ে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। শিক্ষা, যোগাযোগ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থানেও পিছিয়ে এখানকার বাসিন্দারা। বঙ্গোপসাগরের দ্বীপটিকে পর্যটন এলাকা বলা হলেও কোনো উদ্যোগ নেই পর্যটন কর্পোরেশনের। বিশেষ করে বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ সমস্যার কারণে সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে প্রায় সাত লাখ হাতিয়াবাসীকে।

 

এদিকে নদী ভাঙ্গনে ভিটেমাটি ও সহায়সম্বল হারিয়ে হাতিয়ার দু’লাখেরও বেশি মানুষ উদ্বাস্তুর মত মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হাতিয়ায় গড়ে প্রতি বছর এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ পরিবার সর্বস্ব হারাচ্ছে। ভূমিহীন এ মানুষগুলো বেড়ির পার্শ্বে খালের পাড়, খাস জমি, নিঝুমদ্বীপ, ঢালচর, মৌলভীরচর, বয়ারচর, নঙ্গলিয়া, নলেরচর, কেরিংচর ইত্যাদি এলাকায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

হাতিয়ার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারগুলো এক সময়ের ‘স্বপ্নের দ্বীপ’ ছেড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাড়ি জমাচ্ছে। অধিবাসীদের অভিযোগ, ভাঙ্গন এবং যোগাযোগ কাঠামো দূর্বলই হচ্ছে তার একমাত্র কারণ, অন্য কিছু নয়। এই দ্বীপের সাথে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে নৌ-পথ।

 

হাতিয়া হতে নোয়াখালী জেলা সদরে যাতায়াতের জন্য বিআইডব্লিউটিসির দু‘টি সি-ট্রাক রয়েছে। এর মধ্যে যে কোন একটি প্রায়ই অচল থাকে। অন্যটিতে তখন যাত্রীদের বসা দূরের কথা দাঁড়ানোরও জায়গা থাকে না অভিযোগ রয়েছে। এ সময় বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া এবং যাত্রী হয়ে ট্রলারে নদী পারাপার হতে হয়।

 

হাতিয়া নোয়াখালী রুটে রয়েছে যাত্রীবাহী অবৈধ ট্রলারের দৌরাত্ম্য। ফিটনেসবিহীন ট্রলারে যাতায়াত করতে যাত্রী সাধারণকে বিভিন্ন কৌশলে বাধ্য করা হয়। এ যাবত অনেকগুলো ট্রলার দুর্ঘটনায় ব্যাপক যানমালের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পরও উন্নত জলযানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই এ পথে। জোয়ারভাটার উপর নির্ভরশীলতা হাতিয়ায় যাত্রীদের দুঃখ।

 

বর্ষাকালে হাতিয়ার নদী থাকে অশান্ত আর উত্তাল ঢেউ। একটু বাতাস হলে পাহাড়সম ঢেউ আছড়ে পড়ে। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সঙ্গত কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় অভাব প্রকট হয়ে ওঠে। কালোবাজারি ও একশ্রেণীর সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী তখন দ্রব্যসামগ্রীর দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ করে ফেলেন। যাতায়াত সমস্যায় বিনা চিকিৎসায় জটিল রোগী এবং প্রসূতি মায়েরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

 

হাতিয়া’ র প্রধান সমস্যাবলী যাতায়াত সমস্যা, বিদ্যুৎ সমস্যা, নদী ভাঙ্গন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, স্বাস্থ্য সেবার করুণ দশা, অবহেলিত পর্যটন শিল্প, সড়ক সমুহের করুন অবস্থা, দলীয় কোন্দল, নিঝুমদ্বীপের দূর্গম পথ, বনদস্যু ও জলদস্যুর উপদ্রব, চরাঞ্চলের অধিবাসীদের দূরবস্থা, নিঝুমদ্বীপের হরিণ নিধন, পর্যাপ্ত বেড়ি বাঁধ না থাকা, নতুন চরাঞ্চলে অবহেলিত ভূমি ব্যবস্থাপনা, পোনা মাছ নিধন।

 

নদী পারাপারের দুর্ভোগ হাতিয়ার মানুষের নিত্য সঙ্গি। যাত্রীদের উঠা নামার জন্য কোন পল্টুন না থাকলে ও প্রতিদিন পল্টুনের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা নিয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রচায়াই থাকা দালালেরা। আর এসব কিছু চলে প্রশাসনের নাকের ডগায়। হাতিয়া থেকে ফেরার পথে নলচিরা ও চেয়ারম্যান ঘাটে যাত্রীদের অনেক কষ্ট করে ট্রলারে উঠা ও বিভিন্ন অনিয়ম চোখে পড়লে নিজেকে আর সামলাতে পারিনি। হাতিয়াবাসীর প্রশ্ন  আর কত দিন অনিয়ম ও দুর্নীতির ভেড়াজালে আবদ্ধ থাকবে হাতিয়ার সাধারন জনগন?

 

লেখক: কবি ও সাংবাদিক।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email