ফেঁসে যাচ্ছেন বোয়ালখালীর গোমদণ্ডী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক

শিক্ষাবোর্ডের জাল স্বাক্ষরে স্কুল কমিটি

শিক্ষাবোর্ডের জাল স্বাক্ষরে স্কুল কমিটি

শিক্ষাবোর্ডের জাল স্বাক্ষরে স্কুল কমিটি

শিক্ষাবোর্ডের স্কুল পরিদর্শকের স্বাক্ষর জাল করে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন দেখানোর অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন বোয়ালখালীর গোমদণ্ডী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর শিক্ষাবোর্ডের স্কুল পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলীর স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনা সম্প্রতি শিক্ষাবোর্ডের তদন্তে প্রকাশ পায়।

এছাড়াও স্কুলের মুজিব কর্নার ও স্কুল কক্ষ ভেঙে বহুতলবিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন ও দোকান বাণিজ্যসহ ২৭ ধরনের অভিযোগ করে ইউএনও’র নিকট লিখিত অভিযোগের তদন্ত করছেন বোয়ালখালী ইউএনও।

অভিযোগে প্রকাশ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মঈনুল আবেদীন নাজিম শিক্ষাবোর্ডের স্বাক্ষর ও স্মারক জালিয়াতি করে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন দেখিয়েছেন। শিক্ষাবোর্ডের স্কুল পরিদর্শক জালিয়াতির কথা স্বীকার করলেও প্রধান শিক্ষক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর বোয়ালখালীর গোমদণ্ডী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ সদস্যের একটি এডহক কমিটি বোর্ড থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার করেন বিদ্যালয়েল প্রধান শিক্ষক। শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রেরিত এমন একটি চিঠিতে বলা হয়, প্রয়াত এমপি মোছলেম উদ্দিন আহমদকে বোর্ড (মনোনীত) সভাপতি, প্রধান শিক্ষককে (পদাধিকার বলে) সদস্য সচিব, শামীম আরা বেগম (উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক মনোনীত) অভিভাবক সদস্য এবং প্রলয় চৌধুরীকে (জেলা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক মনোনীত) শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য নির্বাচিত করা হয়। এ বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলী বলেন, ‘সম্প্রতি একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর বোয়ালখালীর গোমদণ্ডী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ সদস্যের একটি এডহক কমিটি বোর্ড থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। তবে এই ধরনের কোনো কমিটি শিক্ষাবোর্ড অনুমোদন দেয়নি। ওই চিঠিতে যে স্বারক নম্বর ব্যবহৃত হয়েছে তা ছিল ভুয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই জালিয়াতির ঘটনার বিষয়ে জানতে চেয়ে প্রধান শিক্ষককে চিঠি দিয়েছি। তিনি এখনো চিঠির উত্তর দেননি।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মঈনুল আবেদীন নাজিম গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘এ বিষয়ে শিক্ষাবোর্ড তদন্ত করছে। এই কমিটি কে করেছে তা তদন্ত করে বোর্ড ব্যবস্থা নেবে।’ স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন তিনি।

শিক্ষাবোর্ডের স্বাক্ষর জালিয়াতি ছাড়াও স্কুল কক্ষ ও মুজিব কর্নার ভেঙে বহুতল মার্কেট নির্মাণসহ ২৭ ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে জমা পড়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। বিদ্যালয়ের ছয় সিনিয়র শিক্ষকের নামে এই অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার বিষয়ে একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘দুই বছর ধরে ভুয়া কমিটির মাধ্যমে যেসব লেনদেন ও আয়-ব্যয় হয়েছে তা সবই অবৈধ। দোকান বরাদ্দ থেকে বিদ্যালয়ের ব্যয় নির্বাহ সবকিছুতেই অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে করা হয়েছে।’

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচটি ভবন ভেঙে তিনতলাবিশিষ্ট মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। এমনকি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে মুজিব কর্নারও ভেঙে ফেলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই কর্নার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্বলিত নানা ধরনের বইয়ের সমাহারে তা সাজানো হয়েছিল। তা ভেঙে দোকান নির্মাণ ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এসব দোকান এখন শিক্ষার্থী ও নানা শ্রেণির তরুণ-যুবক ও মানুষের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান না রাখার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্কুল-কলেজের সামনে দোকানে আড্ডা বা বখাটেপনার বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে স্কুলের সাবেক এক প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভবন ভেঙে মার্কেট নির্মাণ করা অন্যায়। সরকারি শর্ত ভঙ্গের সামিল।’

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রসহ অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা বলেন, ‘একজন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অন্যায়, জাল জালিয়াতির ঘটনায় সমাজ লজ্জিত। বিশাল অনিয়মের পরও তার চাকরিতে বহাল থাকা সবাইকে হতবাক করেছে।’

সূত্র: ছবি ও সংবাদ- পূর্বকোণ

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email